চাঁদপুর প্রেসক্লাব

চাঁদপুর প্রেসক্লাবের জমকালো অভিষেক অনুষ্ঠান

চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাথে আমার সম্পর্কটা নিবিড়
………সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি
আমরা গণমাধ্যমকে সত্যের ভিত্তিতে দাঁড় করাতে চাই
……তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত এমপি

স্টাফ রিপোর্টার
জমকালো আয়োজনে অভিষিক্ত হলেন চাঁদপুর প্রেসক্লাবের ২০২৪ সালের কার্যকরী কমিটির নবনির্বাচিত কর্মকর্তাবৃন্দ। স্বাধীনতা যুদ্ধের অগ্নিঝরা মার্চ মাস শুরুর প্রথম দিন শুক্রবার (১ মার্চ) বিকালে এ উপলক্ষে এক বর্ণিল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে। সুপরিসর প্যান্ডেলে বিকাল ৩টার দিকে শুরু হয় এ অনুষ্ঠান। কোরআন তেলাওয়াত, গীতা পাঠ, জাতীয় সংগীত ও প্রেসক্লাবের থিম সং পরিবেশনের মধ্যদিয়ে সূচনা হয় অনুষ্ঠানের। অনুষ্ঠানে বক্তৃতা ছাড়াও সংবর্ধনা পর্ব, বিশেষ সম্মাননা প্রদান আয়োজন ছিলো দারুণ উপভোগ্য।
চাঁদপুর প্রেসক্লাবের ২০২৪ সালের কার্যকরী কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি। তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত এমপি অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে অতিথিবৃন্দ এবং সংবর্ধিত অতিথিদের উত্তরীয় পড়িয়ে, ক্রেস্ট প্রদান ও বই উপহার তুলেন দেন প্রধান অতিথি।
অনুষ্ঠানের শুরুতে চাঁদপুরের তিন কৃতী সন্তান আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অণুজীববিজ্ঞানী ড. সেঁজুতি সাহা, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. দেলোয়ার হোসেন মজুমদার এবং ৬বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত গীতিকার ও সাংবাদিক কবির বকুলকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি, বিশিষ্ট মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মনজুরুল আহসান বুলবুল, জেলা প্রশাসকের পক্ষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক বশির আহমেদ, পুলিশ সুপারের পক্ষে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) সুদীপ্ত রায়, চাঁদপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ ওচমান গনি পাটওয়ারী, চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মো. জিল্লুর রহমান জুয়েল ও দৈনিক যুগান্তরের যুগ্ম-সম্পাদক মহিউদ্দিন সরকার।
সংবর্ধিত অতিথিদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বক্তব্য রাখেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অণুজীববিজ্ঞানী ড. সেঁজুতি সাহা, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. দেলোয়ার হোসেন মজুমদার ও ৬ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত গীতিকার ও সাংবাদিক কবির বকুল।
প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রোটা. মাহবুবুর রহমান সুমন ও সাবেক সভাপতি এএইচএম আহসান উল্লাহ’র যৌথ পরিচালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রেসক্লাব সভাপতি শাহাদাত হোসেন শান্ত। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কাজী শাহাদাত ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক রহিম বাদশা।
এসময় স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ডা. সৈয়দা বদরুন্নাহার চৌধুরী, চাঁদপুর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী মো. মানোয়ার হোসেন, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাখাওয়াত জামিল সৈকতসহ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত সুধীজন, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, পেশাজীবী, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ চাঁদপুর প্রেসক্লাব, টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরাম ও ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সকল পর্যায়ের সদস্য এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া সাংবাদিক, শিল্প-সাহিত্য, সংস্কৃতি, শিক্ষা ও চিকিৎসা পেশায় জড়িতরা অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি বলেন, প্রেসক্লাব আমার খুব আপন জায়গা। ইত্তেফাক পত্রিকার প্রেসের মধ্যে দৌঁড়াদৌড়ি করে আমি বড় হয়েছি। ইত্তেফাক প্রতিষ্ঠার সঙ্গে আমার বাবা জড়িত ছিলেন। আমার বাবা ভাষাবীর এমএ ওয়াদুদকে দেশের মানুষ ইত্তেফাক এবং ছাত্রলীগ হিসেবেই চিনেন। এজন্য সাংবাদিকতার জায়গাটা আমার প্রাণের জায়গা। চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাথে আমার সম্পর্কটা আরো বেশি নিবিড়। আমার রাজনীতি এবং জনপ্রতিনিধি হওয়ার সেই শুরু থেকে এখানকার সাংবাদিকদের সাথে আমার সম্পর্ক অটুট রয়েছে। আশা করি আগামী দিনও থাকবে ইন্শাআল্লাহ।
তিনি আরো বলেন, সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে আমরা চাই বস্তুনিষ্ঠতা, সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং ইতিবাচকতা। আমরা অনেক সময় নিরপেক্ষতার কথা বলে আমাদের দায়িত্ব এড়িয়ে যাই এবং কখনো কখনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দিয়ে ফেলি। হত্যাকারী এবং যিনি হত্যার শিকার হয়েছেন তাদের মধ্যে নিরপেক্ষতার কোন প্রশ্ন নেই। সেখানে প্রশ্নটা হল মুক্তিযুদ্ধ আর যুদ্ধাপরাধী, গণতন্ত্র আর স্বৈরাচারের মধ্যে। গণতন্ত্রহীনতা জনবিচ্ছিন্নতা অধিকার কেড়ে নেওয়া তারমধ্যে সেখানে কিন্তু নিরপেক্ষতার জায়গা নেই। সাদাকে সাদা কালোকে কালো বলতেই হবে। সেই কাজটি যেন আমরা নির্ভীকভাবে করতে পারি- সাংবাদিকদের কাছে এটাই প্রত্যাশা।
মন্ত্রী বলেন, সাংবাদিকতার পেশা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কোন পেশাই কোন কাজেই সততার সাথে করে যাওয়া সহজ নয়। সত্যের পথ সব সময়ই কঠিন। রবি ঠাকুরের কথা -সত্য যে কঠিন, কঠিনে রে ভালোবাসিলাম সে কখনো করে না বঞ্চনা। সেই বিশ্বাস নিয়ে এগুতে হয়। এই বোধ নিয়ে আমরা সত্যের পথে থাকবো। তিনি বলেন, অবশ্যই যোগ বদলাচ্ছে। নতুন নতুন প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে।
উদ্বোধকের বক্তব্যে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত এমপি বলেন, গণমাধ্যম ছাড়া গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ছাড়া এবং গণমাধ্যমের বিকাশ ছাড়া গণতন্ত্র পূর্ণতা পায় না। এরকম বাস্তবতায় আমরা গণমাধ্যমকে সহায়তা দিতে সব সময় প্রস্তুত আছি। গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জায়গায় কোথাও কোনো সমস্যা তৈরি হোক এটা সরকার চায় না এবং হতে দেবে না। আমরা গণমাধ্যমকে সত্যের ভিত্তিতে দাঁড় করাতে চাই। এজন্য পারস্পরিক সহযোগিতা কামনা করছি।
আরাফাত বলেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, তথ্যের অবাধ প্রবাহ এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে অপব্যবহার করে যদি কোনো গোষ্ঠী অপপ্রচার ও মিথ্যাচার করে, সেটি গণতন্ত্র ও সাধারণ মানুষের জন্য ক্ষতিকর। এ ধরনের অপতৎপরতাকে জবাবদিহির আওতায় আনা নিশ্চিত করা হবে। সরকার এটাও বিশ্বাস করে, যারা যুদ্ধাপরাধী, মুক্তযুদ্ধবিরোধী অপশক্তি, জঙ্গি, উগ্রবাদী তাদের একটা জায়গায় রেখে গণতন্ত্র কখনোই সফল হয় না। এজন্য সরকারের অবস্থান উগ্রবাদের বিপক্ষে, জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসের বিপক্ষে, মৌলবাদের বিপক্ষে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাইরে যারা তাদের বিপক্ষে, গণতন্ত্রের পক্ষে, নির্বাচনের পক্ষে। সে জায়গায় গণমাধ্যম, রাজনীতিবিদ, সরকার-সবার মধ্যে ঐকমত্য আছে। সরকার পরিচালনায় ভুল-ভ্রান্তি, বিচ্যুতি থাকলে গণমাধ্যমের মাধ্যমে আমরা শুধরিয়ে নিবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, বেইলী রোডে অগ্নিকাণ্ডের নিহতদের রুহের মাগফেরাত কামনা করি। স্যোসাল মিডিয়ার কারণে আমাদের সাংবাদিকতা আজ প্রশ্নবিদ্ধ। লড়াইয়ে একটি অস্ত্র হচ্ছে সঠিক তথ্য বের করে আনা। যত বেশি সঠিক তথ্য বের করে আনা যাবে, ততো বেশি প্রশ্নবিদ্ধ থেকে বের হয়ে আসা যাবে। চাঁদপুর প্রেসক্লাব ভালো কাজের স্বীকৃতি দেয়।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চাঁদপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ ওচমান গণি পাটওয়ারী বলেন, আমাদের স্যোসাল মিডিয়াগুলোকে জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে হবে। চাঁদপুরের টিআইবিকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত।
বিশেষ অতিথি বক্তব্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায় বলেন, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও জ্ঞানে এগিয়ে আছে চাঁদপুর। চাঁদপুরের ঘরে ঘরে ড. সেঁজুতি সাহা, কবির বকুল ও ইঞ্জি. দেলোয়ার হোসেনের জন্ম হবে বলে আমি মনে করি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. বশির আহমেদ বলেন, আমাদের দেশে একটি প্রথা আছে আমরা নাকি গুণীজনদের সম্মান করতে জানি না। আজ চাঁদপুর প্রেসক্লাব সেই ধারণা পাল্টে দিয়েছেন। আজ যাদের সংবর্ধনা দিয়েছেন তারা সারা দেশের আলোকিত মানুষ।
বিশেষ অতিথি বক্তব্যে চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র অ্যাড. মো. জিল্লুর রহমান জুয়েল বলেন, চাঁদপুরের সাংবাদিকরা দলমত নির্বিশেষে কাজ করে যাচ্ছে। আপনাদের আয়োজনে কৃতজ্ঞতা জানাই। সাংবাদিকদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে আপনারা কাজ করবেন। নিরপেক্ষতার নামে আমরা যেন কোন কিছু আড়াল না করে ফেলি। আমারা যেন স্বাধীনতা ও মুক্তির প্রশ্নে কোন আপোষ না হই।
সংবর্ধিত অতিথির বক্তব্যে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অনুজীব বিজ্ঞানী ড. সেঁজুতি সাহা বলেন, অসংখ্য ধন্যবাদ চাঁদপুর প্রেসক্লাবকে। যখন ঘরে সম্মান পাই তার চেয়ে খুশির আর কিছু নেই। চাঁদপুর আমার বাড়ি ও আমার দেশ। আমি ঘরের মানুষ। আমি ১১ বছর দেশের বাইরে ছিলাম। এখন আমি দেশের মানুষের জন্য কিছু করতে চাই, তাই দেশে ফিরে এসেছি। আমি মূলত কাজ করি, একটি শিশু যে রোগ নিয়ে ভর্তি হয়েছে। সে রোগ কি কি কারণে হয়েছে, খুঁজে বের করি। দেশের মানুষকে সুষ্ঠু থাকতে হবে ভালো থাকতে হবে।
সংবর্ধিত অতিথির বক্তব্যে ছয়বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত গীতিকার ও সাংবাদিক কবির বকুল বলেন, আমার জন্য সবচেয়ে পছন্দের জায়গা হচ্ছে লেখালেখি। আমার শুরুটা হচ্ছে মফস্বল শহর চাঁদপুর থেকে। এই শহরে আমি পুরোপুরি তৈরি হয়ে ঢাকাতে গিয়েছি। আজ চাঁদপুর প্রেসক্লাব আমাকে যে সংবর্ধনা দিয়েছে সেজন্য আমি কৃতজ্ঞ। সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনির হাত থেকে সংবর্ধনা গ্রহণ করতে পেরে আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমি যার হাত থেকে যে সংবর্ধনা গ্রহণ করি তাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ করি।
সংবর্ধিত অতিথি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. দেলোয়ার হোসেন মজুমদার বলেন, এটি আমার জন্যে বিরল সম্মান। সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনির প্রতি কৃতজ্ঞ, কারণ তিনি যখন শিক্ষামন্ত্রী তখন আমি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী হই। আমি চাঁদপুরের সন্তান হিসেবে চাঁদপুরের জন্য যা যা করণীয় তাই করবো।
উল্লেখ্য, চাঁদপুর প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭০ সালে। সেই থেকে নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে চাঁদপুর জেলার সাংবাদিকদের শীর্ষ সংগঠন চাঁদপুর প্রেসক্লাব পার করেছে ৫৪ বছর। অনেক আনন্দ-বেদনার মধ্য দিয়ে এ প্রেসক্লাব পরিণত হয়েছে একটি পরিবারে।
অভিষেক অনুষ্ঠানের শুরুতে কোরআন তেলাওয়াত করেন মাও. আব্দুর রহমান গাজী, গীতাপাঠ করেন সাবেক সেক্রেটারী লক্ষণ চন্দ্র সূত্রধর। এরপর সম্প্রতি মৃত্যুবরণকারী চাঁদপুর প্রেসক্লাবের দু’জন সদস্য ড. মো. সামছুল হক ভূইয়া ও মাহমুদ হোসেনের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি পরিষদের শিল্পীবৃন্দ জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন।

০২ মার্চ, ২০২৪।

Scroll to Top